বৃহস্পতিবার ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

বীমা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আকিজ লাইফ পুরনো স্টাইলেই চালাবে কোম্পানি পর্ষদ!

সিইও পদে চাকরির আবেদনকারিদের সাক্ষাৎকার না নিয়ে এক অনভিজ্ঞ বীমা নির্বাহীর নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে ইড্রায় আবেদন

  |   বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   285 বার পঠিত

সিইও পদে চাকরির আবেদনকারিদের সাক্ষাৎকার না নিয়ে এক  অনভিজ্ঞ বীমা নির্বাহীর নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে ইড্রায় আবেদন

অহিদুজ্জামান মিঞা :
আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগে আবারও বড় ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। কোম্পানিটি উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে অভিজ্ঞ একজন বীমা কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েই কোম্পানি পর্ষদ তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে তার নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের (ইড্রা) কাছে। কোম্পানিটির এ ধরনের কর্মকান্ডে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইড্রার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হতবাক। খবর বিশ্বস্থ সূত্রের।
জানা গেছে, আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ পূরনে কোম্পানির সাজ্জাদুল করিমের নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের (ইড্রা) কাছে আবেদন করা হয়েছে কোম্পানিটির বোর্ডের পক্ষ থেকে। তিনি ইতোপূর্বে কোন বীমা কোম্পানিতে সিইও পদে দায়িত্ব পালন করেন নাই। এমনকি কোন বীমা কোম্পানিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও দায়িত্ব পালন করেন নাই। তবে এই কোম্পানিতে তিনি সবেমাত্র অতিরিক্ত ব্যবস্থানা পরিচালক পদে নিয়াগ পেয়েছেন। একই সাথে তাকে কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই দায়িত্ব দেয়ার মাত্র ২৪ দিনের মাথায় তাকে কোম্পানির সিইও পদে নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে ইড্রায় আবেদন করা হয়েছে।
বীমা আইনে একজন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সরাসরি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন দেয়ার সুযোগ নেই। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন পেতে হলে তাকে ইতোপূর্বে কোন বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন অথবা অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথচ কোম্পানির আবেদনে উল্লেখিত বীমা কর্মকর্তার এ পদে ইতোপূর্বে দায়িত্ব পালনের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এর আগে তিনি দুটি বীমা কোম্পানিতে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই বীমা কোম্পানিতে তিনি ১৬ মার্চ-২০২৫ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে তিনি এই কোম্পানিতে ৬ মাস কনসালট্যান্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে তার নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে ৮ এপ্রিল-২০২৫ ইড্রায় আবেদন করা হয়েছে। অথচ বীমা কোম্পানিটিও তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে নিয়োগ দেয়নি। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে টানা চার বছর কোন সরকার অনুমোদিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ছাড়াই পরিচালিত হয়ে আসছে। অথচ প্রচলিত বীমা আইনে সর্বোচ্চ ৬ মাসের অধিক সময় কোন বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী পদ শূন্য রাখার সুযোগ নেই। অতিতে এ ধরনের ঘটনায় বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইড্রাও সীমাহীন প্রশাসনিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
জানা গেছে, আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ শূন্য দীর্ঘ চার বছর। কোম্পানিটির এ পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন সদ্য বিদায়ী বীমা কর্মকর্তা আলমগীর চৌধুরী। তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যান সেক শামিম উদ্দিনের নিকট আত্মীয়। কিন্তু তার শিক্ষা সনদ নিয়ে বিতর্ক থাকায় বীমা কর্তৃপক্ষ তার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করে নাই। বিষয়টি আদালত পযর্ন্তও গড়িয়েছে। কিন্তু তিনি শেষ পযর্ন্ত অনুমোদন পাননি। বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ায় অবশেষে কোম্পানিটির পরিচালনা বোর্ড অতিসম্প্রতি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় এবং একজন উপযুক্ত সিইও নিয়োগ দিতে সংবাদ পত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে দরখাস্ত আহবান করে। আগ্রহী পাচঁজন প্রার্থী এ পদের জন্য আবেদন করেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ি কোম্পানিটির পরিচালনা বোর্ড তাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে এবং সিইও নিয়োগ প্রবিধান মালার শর্ত পূরন সাপেক্ষে তাদের মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করবে এবং তার নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করবে। বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আবেদনটি যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিবে। অনুমোদন পেলে তিনিই হবেন কোম্পানিটির পরবর্তী মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। অথচ এ ক্ষেত্রে তার কোন নিয়ম অনুসরন করা হয় নাই। এ পযর্ন্ত আবেদনকারিদের কাউকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়নি। কোম্পানিতে ৬ মাস আগে কনসালট্যান্ট পদে নিয়োগ পাওয়া জনৈক সাজ্জাদুল করিমকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দিয়েই সিইও পদে তার নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে ইড্রায় আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, বোর্ডের পরিচালক মুহম্মদ ফুয়াদ আহমেদের ব্যাক্তিগত পছন্দের বীমা কর্মকর্তা জনৈক সাজ্জাদুল করিমকে কোম্পানিতে গত ১৬ মার্চ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে তিনি এ কোম্পানির কনসালট্যান্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত অক্টোবর মাসে ৬ মাসের জন্য তাকে এ কোম্পানির কনসালট্যান্ট পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এখন তাকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হলো। এর আগে তিনি কোন বীমা কোম্পানিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন নাই। তিনি এর আগে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে এই প্রথম তিনি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ পান। এই নিয়োগ দেয়ার মাত্র ২৪ দিন পর তাকে এমডি নিয়োগ না দিয়েই কোম্পানির এমডি ও সিইও পদে এই নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে গত ৮ এপ্রিল বীমা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে আবেদন করা হয়।
জানা গেছে, এই বীমা কোম্পানিটিতে পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে কোম্পানি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই। চেয়ারম্যান সেক শামিম উদ্দিন শুরু থেকে কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রন করে আসছিলেন। তার পছন্দের এমডি ছিলেন আলমগীর চৌধুরী। তিনি বীমা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না পেলেও নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে পার করে দিয়েছেন চারটি বছর। দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক কিছুর মতো আকিজ তাকাফুলেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। এখন সবকিছু নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছেন পরিচালক ফুয়াদ আহমেদ। পরিচালক মুহম্মদ ফুয়াদ আহমেদ চেয়ারম্যান না হলেও তিনি বর্তমানে বোর্ডে অধিক ক্ষমতাধর। ফলে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তার পছন্দের লোককে এমডি করতে চান তিনি। এ জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন তার ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্থ লোক সাজ্জাদুল করিমকে। কিন্তু সাজ্জাদুল করিম কোন বীমা কোম্পানির সিইও বা এমডি হবার মতো যোগ্যতা এখনো অজর্ণ করেন নাই। কোন বীমা কোম্পানির সিইও বা এমডি নিয়োগ নীতিমালা সম্পর্কে তার তেমন ধারনাও নেই। সাজ্জাদ করিমকে এমডি করার ব্যাপারে চেয়ারম্যান শামিম জোরালো আপত্তি জানান, কিন্তু তার এই আপত্তি ধোপে টিকে নাই।
বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ প্রবিধান ৪ এর উপ-প্রবিধান (১ক)তে বলা হয়েছে, কোন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরন ও উল্লেখপূর্বক বহুল প্রচলিত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এবং কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কারবে এবং যোগ্য আবেদনকারিদের সাক্ষাৎকার গ্রহনের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ একজন যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য নির্বাচন করবে। প্রবিধানমালায় পেশাগত অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে উল্লেখ রয়েছে, ইতোপূর্বে কোন বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন অথবা উহার অব্যবহিত নিম্নপদে অর্থাৎ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচারক পদে অন্যুন দুই বছরের অভিজ্ঞ হতে হবে। অথচ সাজ্জাদুল করিমের ক্ষেত্রে এ দুটি শর্তের একটিও পূরন হয়নি।
জানা গেছে, বীমা কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ব্যবসা পরিচালনায় বীমা আইন লংঘন করে আসছে। চতুর্থ প্রজন্মের এই বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানিটি বীমা ব্যবসা করার জন্য ২০২১ সালে লাইসেন্স পেয়েছে। কোম্পানিটির ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু থেকে অদ্যাবদি পযর্ন্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদ শূন্য রয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বীমা আইনের তোয়াক্কা না করে এ ভাবেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে চাচ্ছে। যা বীমা সেক্টরে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠায় বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগকে বাধাগ্রস্থ করবে।
কোম্পানিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে সদ্য নিয়োগ পাওয়া সাজ্জাদুল করিম অর্থবিজকে তার নিয়োগ লাভের খবরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তাকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত এমডি করা হয়েছে। এ জন্য ইড্রায় চিঠি দিয়ে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও আপনাকে কেন ভারপ্রাপ্ত এমডি করা হলো এবং আপনি কেন এ পদে নিয়োগে রাজী হলেন, জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, একবারে পূনার্ঙ্গ এমডি হওয়া যায় না, এখন ভারপ্রাপ্ত এমডি হয়েছি এবং পরে হয়তোবা পূণার্ঙ্গ এমডি হতে পারব।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কোম্পানির চেয়ারম্যান সেখ শামিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নাই।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৫৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

Arthobiz |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক : অহিদুজ্জামান মিঞা
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: খান ম্যানশন, ৮-ই, ২৮/এ-৫, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: arthobiz61@gmail.com
যোগাযোগ: 01670045191